মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ::
বান্দরবান জেলায় ৮৫২টি মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানির প্রচন্ড সংকট বিরাজ করছে। এইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুপেয় পানির অভাবে খাল, ঝিরি, নালা ও কুপের পানি পান করছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা পানিবাহিত নানা রোগে ভুগছে। সামনে শুষ্ক মৌসুমে এই পানির সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, লামার রাঙ্গাঝিরি মো. ইউনুচ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিমা আক্তার।
সরজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানীয় জলের সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। ছাত্র/ছাত্রীরা বেশিরভাগ সময় ঝিরি ও ছড়ার পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করেন। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব মতে বান্দরবান জেলায় ৫৫% জনসাধারণ সুপেয় পানি পান করে।
লামা উপজেলার এম. হোসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুমিনুল ইসলাম, মংশৈনু মার্মা, এব্রাচিং মার্মা, রিপু বড়–য়া ও সুমি আক্তার জানান, তাদের বিদ্যালয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা নাই। পানির পিপাসা লাগলে তারা পাশের পোপা খালের পানি পান করে। বেশির ভাগ সময় এই খালের পানি ঘোলা থাকে। নতুন ভবন নির্মাণ হলেও তাতে পয়নিস্কাষণের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. জিয়াবুল হক জানান, অত্র প্রতিষ্ঠানে কোন টিউবওয়েল নাই। একই চিত্র পুরো বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর।
আলীকদম উপজেলার অসতী ত্রিপুরা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায় বিদ্যালয়টিতে একটি রিংওয়েল থাকলেও তার দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনে গরু-ছাগল বাধা হয়। বিদ্যালয়ের মাঠ, বারান্দা ও চারপাশের পরিবেশ ময়লা আবর্জনাপূর্ণ। বিদ্যালয় খোলা থাকলেও শিক্ষকদের উপস্থিতি কম ছিল এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩৪৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনজিও পরিচালিত ১১৩, কিন্ডার গার্টেন ১২, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ৫, আনন্দ স্কুল ১৬৬, বেসরকারী ১১০ ও অন্যান্য বিদ্যালয় ৩২টি রয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৮২টি স্কুলে ৭৬ হাজার ৯শত ৮৮জন ছাত্র/ছাত্রী লেখাপড়া করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়–য়া (ভারপ্রাপ্ত) জানান, কয়টি বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা আছে তার তথ্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নাই। তবে এলজিইডি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের সাথে টিউবওয়েল নির্মাণ করে। কিছুদিন পর সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সোমা রানী বড়–য়া জানান, জেলায় ৮টি সরকারী, ৩৩টি এমপিওভুক্ত ও ২৯টি পাঠদান অনুমোদন প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেকায়েফ প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অগভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় যার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে আছ্
ে
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মৌ. তৈয়ব আলী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় ছাত্র/ছাত্রীরা বিশুদ্ধ পানি করতে পারছে না। যে কারণে বেশিরভাগ ছাত্র/ছাত্রী পানি শূণ্যতায় ভুগছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাত্র/ছাত্রীরা ঝিরি ও ছড়ার অস্বাস্থ্যকর পানি পান করে। অনেক বিদ্যালয়ে মেরামতের অভাবে রিংওয়েল ও টিউবওয়েল অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষে মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, জেলায় পিইডিপি-৩ এর মাধ্যমে ৩৫টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি বছর আরো ৬টি ওয়াশ ব্লক নিমার্ণ করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ উদ্যোগে খুচরা যন্ত্রাংশ দিয়ে রিংওয়েল ও টিউবওয়েলগুলো মেরামত করে নিতে পারে।
পাঠকের মতামত: